ভালো খেজুরের গুড় চেনার উপায় এবং খেজুরের গুড়ের উপকারিতা



খেজুরের গুড় (Date Molasses)
খেজুরের গুড় যুগ যুগ ধরে সবার পছন্দের এবং জনপ্রিয়তার শীর্ষে। খেজুর গাছের রস থেকে যে গুড় তৈরি হয়,তাই মূলত খেজুর গুড়।
যা অনেক সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। খেজুরের গুড়ে তৈরি করা পিঠা পায়েস স্বাদে অতুলনীয় এবং তৃপ্তিকর।অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতকালে খেজুরের গুড়ের চাহিদা বেশি বৃদ্ধি পায়।
কারণ, শীতে বাঙালীরা বেশি পিঠা-পুলি তৈরি করে থাকে এবং বিভিন্ন পিঠা-পুলির উৎসব এরও আয়োজন করে থাকে ।
এই পিঠা-পুলির স্বাদ দ্বিগুন বাড়িয়ে তুলতে খেজুর গুড় ব্যবহার করা হয়। আসল বা খাঁটি খেজুরের গুড় খাবারে অনন্য মাত্রা ও স্বাদ নিয়ে আসে।



খেজুর গাছের মিষ্টি রস সংগ্রহ করার পর বিভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে সুস্বাদু গুড় তৈরি করা হয়।
খেজুরের রস স্বাদে অনন্য ,খেজুরের রসও বিভিন্ন পিঠা পুলিতে ব্যবহার করা যায়। খেজুর রস থেকে তৈরিকৃত পাটালি এবং নলেন গুড়ও স্বাদে অন্যতম।
খেজুরের গুড় দিয়ে তৈরি হয় ক্ষীর- পায়েস,পিঠা এমনকি এই উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয় চা- যা আমাদের জন্য মুখোরোচক এবং উপকারি।
চিনির তুলনায় গুড়ে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকে, তাই গুড় আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী।
খেজুরের গুড় যেমন স্বাদে অনন্য ,তেমন অনেক পুষ্টিগুনে ভরা।
খেজুরের গুড়ে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ,যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সক্ষম এবং সেই সাথে রূপচর্চাতেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
খেজুরের গুড়ে রয়েছে ভিটামিন-বি, আয়রণ,জিঙ্ক,ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম,ভিটামিন-সি ম্যাগনেশিয়ামসহ আরও অন্যান্য উপাদান, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারি।
খাঁটি বা আসল খেজুরের গুড় চেনার সহজ উপায়



বর্তমানে ব্যবসায়ীরা অতি লোভের আশায় বিভিন্ন ভেজাল মিশিয়ে খাঁটি গুড়ের স্বাদ ও মানকে নষ্ট করে দেয়।
যার ফলে অনেকেই না চিনে খাটিঁ গুড়ের পরিবর্তে ভেজাল বা নকল গুড় কিনে খাঁটি গুড়ের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়।
তাই খাটিঁ গুড় কেনার সময় ভালো-মন্দ যাচাই করে তারপর গুড় কেনা উচিত।
ভেজাল গুড় ব্যবহারে খাবারের মান যেমন নষ্ট হয়,তেমন এর দ্বারা তৈরিকৃত খাবারও আমাদের শরীরে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং খাঁটি গুড়ের স্বাদ পেতে হলে অবশ্যই গুড় কেনার সময় কিছু সতর্কতা ও নিয়ম অনুসরণ করা প্রয়োজন।
খাঁটি আসল খেজুরের গুড় চেনার নিয়মাবলি



1. সাধারণত খেজুরের গুড়ের রঙ গাঢ় বাদামি বা খয়েরি হয়।
2. ক্যামিক্যাল বা রাসায়নিক জাতীয় কিছু গুড়ে ব্যবহার করলে গুড়ের রঙ পরিবর্তন হয়ে যায় এবং হলুদের মত দেখায়।তাই সেগুলো না কেনাই ভালো ।
3. খাঁটি খেজুরের গুড় উজ্জ্বল হয়না।
4. খাঁটি গুড় কেনার সময় গুড়ের সাইড একটু ভেঙ্গে দেখতে হবে, যদি শক্ত হয় তাহলে বুঝতে গুড়্গুলো খুব ভালো না।
5. গুড় টেস্ট করার সময় যদি তিতা মনে হয়, তাহলে বুঝতে হবে এগুলো ভালোমানের না।
6. খেজুর গুড় স্ফটিকের মত দেখালে তা ভালোমানের হয়না
7. এছাড়াও গুড়ের স্বাদ যদি নোনতা মনে হয় তাহলেও বুঝে নিতে হবে ।
8. এছাড়াও অনেক ব্যবসায়ী অতি লোভের আশায় গুড়ে হাইড়্রোজ ক্যালিক্যাল ব্যবহার করে থাকে, তাই গুড় কিনার সময় জেনে বুঝে যাচাই ,করে কেনা উচিত।আসল গুড় খয়েরী রঙের এবং গুনে ও মানে সেরা হয়।



গুড় কেনার সময় মূলত উপোরোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত।যা আমাদের খাঁটি বা আসল গুড় কিনতে বা চিনতে সহায়ক ভুমিকা রাখবে।
খাঁটি খেজুরের গুড় শুধুমাত্র শীতকালে এবং সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি করা হয় ।তাই, খাটি খেজুরের গুড় ভালোভাবে সংরক্ষণ করলে অনেকদিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য চিনির পরিবর্তে গুড় বা গুড় দিয়ে তৈরি করা শরবত বা অন্যান্য যেকোন খাবার খাওয়া উচিত।
কারণ,চিনিতে অতি মাত্রাই কার্বহাইড্রেড থাকে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব একটা সুবিধাজনক নই।
সব ঋতুতেই গুড় খাওয়া উচিত। বিশেষ করে, শীতকালে গুড় খাওয়া অনেক উপকারি।কেননা, গুড় আমাদের শরীরের তাপকে স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
নিয়মিত গুড় খেলে আমাদের শরীর বিভিন্ন সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
খেজুর গুড় যেহেতু আমদের স্বাস্থ্যের জন্যে ভীষণ উপকারি। তাই এর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো।
আসুন খেজুর গুড়ের উপকারিতা সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিই



1. জ্বর এবং সর্দি-কাশি নির্মূলে গুড় খাওয়া ভীষণ উপকারি।
2. যকৃত বা লিভার, ফুস্ফুস, এগুলো নিরাময় বা ভালো রাখতেও গুড় বিশেষ ভুমিকা পালন করে।
3. রক্তে হিমোগ্লেবিনের মাত্রা বাড়াতে এবং রক্তসল্পতা রোধ করতে গুড় অনেক উপকারি।
4. গুড় আমাদের স্টমাককে ঠান্ডা রাখে এবং এর কর্মক্ষমতা বাড়াতেও সহায়তা করে থাকে।
5. গুড় খেলে অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
6. গুড় শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সহায়তা করে ফলে শরীরের ওজনের পরিমাণ হ্রাস বা স্বাভাবিক করতে সহায়তা করে।
7. গুড় হজম শক্ত বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়েও সহায়তা করে থাকে। তাই, নিয়মিত অল্প পরিমাণে গুড় খাওয়া উচিত।



8. গুড় আমাদের শরীরে মিনারেলের চাহিদাও পূরণ করতে সক্ষম।
9. গুড় আমাদের শরীরের আয়রনের ঘাটতি দূর করতেও বিশেষ ভুমিকা পালন করে।
10. গুড়ে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য উপাদান হাঁড় ও দাত শক্ত ও মজবুত করে।
11. গুড় খেলে হরমোনজনিত সমস্যা লাঘব হয়।
12. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও গুড়ের ভুমিকা অনেক।
13. গাঁটের ব্যথা দূরীকরণেও গুড়ের কার্যকর ভূমিকা রয়েছে।
14. অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে অনেক সময় শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে ।শরীরের ক্লান্তি দূর করতে গুড় খাওয়া উচিত।
15. গুড় খেলে ব্লাড পেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
16. গলাব্যথ্যা এবং বুকে জমাট বাধা কফ নির্মূলের জন্য গুড় খাওয়া ভালো।
17. গুড়ে রয়েছে নানা পুষ্টি উপাদান,তাই গুড় খাওয়ার ফলে আমাদের ত্বক ও চুল স্বাভাবিক ভাবে সুন্দর ও উজ্জ্বল হয়ে উঠে।
18. গুড় দ্রুত আমাদের শরীরের রক্তের সাথে মিশে যাওয়ার ফলে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পাই ।
খাঁটি গুড় যেমন স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি, তেমন গুনে,মানে ও স্বাদে অনন্য আর খেজুর গুড় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য।
সতর্কতা



ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অর্থ্যাৎ যারা ডায়বেটিক জনিত সমস্যায় ভুগছেন।তাদের খেজুরের গুড় খাওয়া উচিত নয় বা, না খাওয়ায় ভালো।
ভালো ও সুস্থ থাকার জন্য ভালো খাবারের বিকল্প নেই।তাই খাবার খাওয়ার আগে এবং কেনার সময় তার প্রয়োজীয়তা এবং পুষ্টিগুন সম্পর্কে ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়।
খাদ্য জাতীয় দ্রবাদি কেনার সময় সচেতন থাকি এবং শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখি।